বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: বাংলার ক্ষমতায় বিজেপি এলে কৃষকদের যত বকেয়া রয়েছে, সেইসঙ্গে পিএম (প্রধানমন্ত্রী) কিসান প্রকল্পের সমস্ত সুবিধাও দেওয়া হবে। হলদিয়া থেকে এমন প্রতিশ্রুতিই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রবিবার হলদিয়ায় তিনি কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তার পর সেখানেই আলাদা ভাবে বিজেপির একটি জনসভায় যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভার প্রথম যে বৈঠক হবে, সেখানেই এ বিষয়ে কৃষকদের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। আর তা কার্যকরের ব্যবস্থাও হবে।’ এদিন দুপুরে তিনি প্রথমে কলকাতা বিমানবন্দরে আসেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে সোজা চলে যান হলদিয়ায়।
এদিন রাজনৈতিক জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ও দেবশ্রী চৌধুরী, বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বাংলায় কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সরকারি অনুষ্ঠানটিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু তিনি আসেননি। সরকারি কর্মসূচি ছাড়াও এদিন হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশ নেন। সেই জনসভায় তিনি বলেন, ‘এবার পরিবর্তন হবেই। আপনারা নিশ্চিত থাকুন। তবে এদের গোপন বন্ধুদের থেকে সাবধান থাকুন। দিল্লিতে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সমঝোতা ও রণকৌশল তৈরি হয়েছে। কেরলের মতো এখানে তৃণমূলও সেই ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছে। তাই বাম–কংগ্রেসকে ভোট দিলে আপনার ভোট নষ্টই হবে। তাদের ভোট দেবেন না।’ তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের সম্বন্ধে বলেন, ‘তৃণমূলে থেকে গরিব মানুষের জন্য কাজ করা যায় না। তাই সত্যি সত্যিই গরিবের কথা যাঁরা ভাবেন, তাঁরা আজ ‘রাম–রাম’ বলে তৃণমূল ছাড়ছেন। আজ তাঁরা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। আমরা সবাই মিলে বাংলাকে তোলাবাজ মুক্ত করে ছাড়ব।’
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিশানায় ছিল রাজ্য সরকার ও শাসক দল তৃণমূল। তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যের সরকার যেমন নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর করেনি, তেমনই রেশন কার্ড প্রকল্পও চালু হতে দেয়নি। এর ফলে ক্ষতি যা হওয়ার, তা হয়েছে গরিব শ্রমিকদেরই। এমনকী, সরকারি কর্মীদের জন্য এখনও সপ্তম বেতন কমিশন চালু করতে দেয়নি। অন্যদিকে, এই সরকার নিজেদের কর্মীদেরও বেতন দিতে পারছে না।’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে উন্নয়ন প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় ৩৬ লক্ষ গরিব মানুষ টাকা পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলায় ৭৩ লক্ষ শৌচাগার তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু এই রাজ্যের সরকার প্রকৃত উন্নয়ন করেনি। করতে আগ্রহীও নয়। রাজ্যের সত্যিকারের উন্নয়ন করতে হলে এখানেও ডাবল ইঞ্জিন সরকার প্রয়োজন। তাই বিজেপিকে দরকার। ক্ষমতায় বিজেপি এলে তবেই এখানে আসল পরিবর্তন হবে। আসল পরিবর্তন কী, তা ত্রিপুরার মানুষ এখন বুঝতে পেরেছেন। ওখানেও বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষের ওপর বামপন্থী দলগুলি অত্যাচার করে গিয়েছে। আজ সেখানে উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে!’
তিনি বলেন, ‘মমতাদির সরকার আয়ুষ্মান প্রকল্পের সুবিধা থেকে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত রেখেছে। এই প্রকল্প থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুবিধা পেতে পারতেন সকলে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও প্রকল্পই বাস্তবায়িত হতে দেয় না এই রাজ্যের সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার ৪ কোটি মানুষের জনধন অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। তাই করোনার সময় সরকারের কাছ থেকে টাকা পেয়েছিলেন মানুষ। করোনার সময় কৃষকদের অ্যাকাউন্টে মোট ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে। বাংলার কৃষকরাও এই সুবিধা পেতে পারতেন। কিন্তু এখানকার সরকার এই প্রকল্প নিতেই চায়নি।’ তিনি আরও স্পষ্ট বলেন, ‘প্রকল্পের সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের কাছে ২৫ লক্ষ কৃষকের নাম চেয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার দিয়েছিল মাত্র ৬ হাজার নাম। ভাবুন অবস্থাটা!’
এর পর সরাসরি রাজনৈতিক নন্দীগ্রাম গণহত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘নন্দীগ্রামে যাঁরা গুলি চালিয়েছিলেন, যাঁরা গরিবের রক্ত বইয়েছিলেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া দূরের কথা, তৃণমূল নেত্রী তাঁদের দলে নিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু কেন? বাংলার মানুষ কি শুধু নির্বাচনের ঘুঁটি? দুঃসময়েও এখানকার রাজনীতিকরা নিজেদের ফায়দা খোঁজেন।’ মমতাকে এদিন কার্যত তিনি ‘নির্মমতা’ বলেও উল্লেখ করেন। বলেন, ‘মমতার বদলে নির্মমতাই পেয়েছে বাংলার মানুষ।’ তিনি বলেন, ‘ভারতকে বদনাম করতে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতের ভাবমূর্তি নষ্টের পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু এ নিয়ে দিদির মুখ থেকে একটি কথাও বেরোয় না। রাস্তায় রোজ খুন হলে যুবকরা চাকরি পাবেন কী করে? উন্নতির কথা বললেই দিদি রেগে যান। ভারত মাতার জয় শুনলে রেগে যান। কিন্তু দেশবিরোধী মন্তব্যে কিছু যায় আসে না তাঁর।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আজ বাংলায় দাঁড়িয়ে একটা প্রশ্ন করতে চাই। ব্রিটিশ শাসনের সময়ও পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বিকশিত রাজ্য ছিল। পরিকাঠামো, বাণিজ্যে বাংলার মোকাবিলা করার মতো কেউ ছিল না। বাংলার কৃষক খুব পরিশ্রমী। বাংলায় উন্নয়নের সেই গতি থমকে গেল কেন? এত বড় বড় বন্দর থাকতে অন্য রাজ্য বাণিজ্যে বাংলাকে টপকে গেল কী ভাবে?’ এদিন হলদিয়ায় মোদি দাবি করেন, বিজেপিই বাংলায় সরকার গড়ছে।